কোন বয়সে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ শুরু করা ভালো? এর সহজ উত্তর হলো, যত আগে শুরু করবেন, ততই ভালো। আমাদের মধ্যে একটা ধারণা থাকতে পারে—এখনো চাকরি করা শুরু করিনি, এখনই কিসের টাকা জমানো? টাকা উপার্জন করা শুরু করি, তারপর জমানোর বিষয়টা দেখা যাবে। আবার এমন হতে পারে, কেবল চাকরি শুরু করেছি, কয়েক বছর যাক, তারপর জমানো শুরু করব। এই করে করে অনেকটা সময় চলে যায়; কিন্তু জমানো আর শুরু হয়নি।
এদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব বাড়তে থাকে এবং আয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খরচের পরিমাণও বাড়তে থাকে। কয়েক বছর আগে টাকা জমানো যতটা সহজ হতো, এখন দিনের পর দিন ততটাই অসম্ভব মনে হচ্ছে। কিন্তু আপনি জীবনের যে ধাপেই থাকুন না কেন, আপনার কাছে অসম্ভব মনে হলেও আপনি যখনই হাতে কিছু টাকা রয়ে যাবে, তা–ই সঞ্চয় করে ফেলুন। এভাবে আস্তে আস্তে দেখবেন, আপনার বেশ টাকা জমে গেছে। তাই একবার শুরুটা করুন.
টাকা জমানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, লক্ষ্য ঠিক করা। আপনি জমানো টাকা দিয়ে কী করতে চাচ্ছেন, তা যদি ঠিক থাকে, তাহলে দেখা যাবে, আপনার টাকা সঞ্চয়ের আগ্রহটা বাড়বে। এবং আপনি নিয়মিত যেকোনো পরিমাণই হোক তা আপনি জমানোর চেষ্টা করবেন। তবে এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার লক্ষ্যকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন। স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হলো, আগামী এক বছরের মধ্যে আপনি জমানো টাকা দিয়ে কী করতে চাচ্ছেন? যেমন হতে পারে আপনি একটি স্মার্টফোন বা ক্যামেরা কিনতে চাচ্ছেন, আপনি আপনার পছন্দের কোনো জায়গায় ঘুরতে যেতে চাচ্ছেন ইত্যাদি। আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হতে পারে, আগামী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় পর আপনি জমানো টাকা দিয়ে কী করতে চাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে হতে পারে, পড়া শেষ করে চাকরি না করে আপনি নিজেই একটা কিছু করতে চাচ্ছেন। আবার হতে পারে আপনি এখন ভাড়া বাসায় থাকেন। কিন্তু পাঁচ বছর পর জমানো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাটের কিস্তি দিতে চাচ্ছেন ইত্যাদি।
বিশেষজ্ঞরা বাবা-মাকে পরামর্শ দেন, তাঁরা যেন তাঁদের বাচ্চাদের সঞ্চয় করার মানসিকতা তৈরি করেন। এতে তারা অল্প অল্প করে যখন শুরু করবে। তখন তারা জীবনের যেকোনো সময় খরচের পর হাতে সামান্য কিছু থেকে গেলও তা–ই তারা জমাতে দ্বিধা করবে না। এ জন্য আপনি বাচ্চাদের মাটির ব্যাংক কিনে দিতে পারেন। এবং প্রতিদিন বাসায় ফিরে খুচরা যে টাকা থাকবে, তা তাদের হাতে দিতে পারেন, ওই মাটির ব্যাংকে জমানোর জন্য এবং একটা বিশেষ দিনে এই মাটির ব্যাংক ভেঙে তা দিয়ে ভালো একটা কিছু করার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন। তাই সময়ের জন্য অপেক্ষা না করে এখন থেকেই আপনি সঞ্চয় শুরু করে দিন। আপনার যেকোনো বয়সই হোক না কেন, তা বিষয় নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সিএনএন মানি বয়সকে চারটি ধাপে ভাগ করে কোন ধাপে কত করে জমাতে হবে তার একটি হিসাব দেখিয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, জীবনে সফল হওয়ার জন্য আপনি যেমন লক্ষ্য ঠিক করেন, তেমনি আপনি যদি ঠিক করেন আপনি মিলিয়নেয়ার হবেন, তাহলে তা কঠিন কিছুই হবে না। কিছু সাধারণ নিয়ম আছে যা মেনে চললে এ ক্ষেত্রে সফল হওয়া যাবে।
চলুন জেনে নিই মিলিয়নেয়ার হতে চাইলে কোন বয়সে আমেরিকানদের কত করে জমাতে হবে।
২৫ বছর বয়সে
টাকা জমানোর ক্ষেত্রে ২৫ বছর বয়স হলো সবচেয়ে ভালো একটা সময়। এ সময় থেকেই যদি শুরু করা যায়, তাহলে মাসে খুবই অল্প জমিয়ে সেই লক্ষ্য অর্জন করা খুবই সহজ হবে।
মাত্র ১৭৫ ডলার করে জমালে ৬৫ বছর বয়সে যখন কেউ অবসর নেবেন, তখন তিনি হয়ে যাবেন একজন মিলিয়নেয়ার। প্রতি মাসে ১৭৫ ডলার করে জমালে আগামী ৪০ বছরে দিতে হবে মাত্র ৮৪ হাজার ডলার। আর বাকি ৯ লাখ ১৬ হাজার ডলার আসবে জমানো অর্থের রিটার্ন থেকে। তবে কেউ যদি মাসে এই পরিমাণ ডলারও জমাতে না পারেন, তাহলে যে পরিমাণেই পারেন তা যত ছোট অঙ্কই হোক তা দিয়েই শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৩৫ বছর বয়সে
যাদের বয়স এখন ৩৫ এবং এখনো কোনো সঞ্চয় নেই, তাঁদের মাসিক জমানোর পরিমাণ দুই গুণের থেকেও বেশি হবে ২৫ বছর বয়সীদের তুলনায়। ৩৫ বছর বয়সীদের মাসে জমাতে হবে ৪৭০ ডলার করে। মাসে এই পরিমাণ ডলার জমালে আগামী ৩০ বছরে জমা হবে ১ লাখ ৬৯ হাজার ডলার। আর মিলিয়নেয়ার হতে বাকিটা আসবে তাঁর জমানো অর্থের রিটার্ন থেকে।
৪৫ বছর বয়সে
এই বয়সে কেউ যদি মিলিয়নেয়ার হতে চায়, তাহলে তাঁকে জমাতে হবে মাসে ১ হাজার ৩৩০ ডলার করে। তাহলে আগামী ২০ বছরে তাঁর জমবে ৩ লাখ ১৯ হাজার ডলার। বাকি ডলার আসবে রিটার্ন থেকে।
৫৫ বছর বয়সে
যাঁদের বয়স ৫৫ কিন্তু কোনো সঞ্চয় নেই, তাঁদের জমানোর পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের তুলনায় খুবই বেশি হবে। মাসে ৪ হাজার ৮০০ ডলার করে আগামী ১০ বছর জমালে, একজন আমেরিকান ৬৫ বছর বয়সে মিলিয়নেয়ার হবেন। তাঁকে ১০ বছরে দিতে হবে ৫ লাখ ৭৬ হাজার ডলার; এবং বাকিটা আসবে তার রিটার্ন থেকে।�ওপরে আমেরিকানদের জন্য এই হিসাব দেওয়া হয়েছে। এক মিলিয়ন (১০ লাখ) ইউএস ডলার বাংলাদেশি টাকায় ১০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০০ টাকা ধরে)। আপনি ১০ কোটি টাকার জায়গায় ১ কোটি টাকা জমানোর লক্ষ্য ঠিক করতে পারেন। তবে যদি এর বেশি জমাতে পারেন, তাহলে আপনার জন্য আরও ভালো।
বর্তমান সময়ে আবার জমাব কী, যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার খরচ চালিয়ে হাতে কিছুই থাকে না, যাঁরা এ কথা বলছেন, তাঁরা লক্ষ্য করুন, আপনি যদি ১৭৫ ডলারের স্থলে মাসে ১৭৫ টাকা করে সঞ্চয় করেন, তাহলে ৬৫ বছর বয়সে আপনি যখন অবসরে যাবেন, তখন আপনার হাতে ১০ লাখ টাকা থাকবে। শূন্য হাতে অবসরে যাওয়ার চেয়ে ১০ লাখ টাকা হাতে থাকা অনেক বড় একটা বিষয়।
আপনি যদি ১৭৫ টাকা থেকে আরও বেশি পরিমাণে জমাতে পারেন, তাহলে দীর্ঘ সময় পর অবশ্যই আপনার আরও বেশি টাকা জমবে। আপনি আরেকটা সহজ উপায় বের করে নিতে পারেন। আপনার বয়স যদি এখন ২৫ বছর হয়, তাহলে আপনি যে আয় করছেন, তা যদি খরচ হয়ে যায়, তাহলে আপনি মাসে অন্তত ৫০০ টাকা সঞ্চয়ের একটা প্ল্যান ঠিক করতে পারেন। এই ৫০০ টাকা আপনি একসঙ্গে আলাদা না করে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে আলাদা করে রাখুন। তাহলে প্রতি সপ্তাহে ১২৫ টাকা করে আলাদাভাবে সরিয়ে রাখতে হবে। সপ্তাহে যেদিন বাজার করবেন, ওই দিন আপনি এই ১২৫ টাকা আলাদা করে রেখে দেবেন। তাহলে দেখবেন ৪ সপ্তাহে আপনার ৫০০ টাকা জমা হয়ে গেছে। এই ৫০০ টাকা দিয়ে আপনি আপাতত একটা ডিপিএস শুরু করুন।
আপনি ১৭৫ টাকা মাসে সঞ্চয় করলে ৬৫ বছর বয়সে ১০ লাখ টাকা পাচ্ছেন। আর যদি মাসে ৫০০ টাকা করে সঞ্চয় করতে পারেন, তাহলে এই একই সময়ে প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ টাকা পেতে পারেন। এ টাকা দিয়ে আপনি ভালো একটা কাজ করতে পারবেন বা অবসরে যাওয়ার পর ছেলেমেয়ে টাকা দেবে কি না, এ চিন্তা করতে হবে না। বরং আপনি অবসরে গিয়েও ছেলেমেয়েকে তাদের দরকারের সময় টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। তবে যেটা মনে রাখতে হবে, আপনি যত আগে এই সঞ্চয় করা শুরু করবেন, তত ভালো অবস্থানে থাকবেন।
প্রথম আলো থেকে সংগৃহীত…